Google দীর্ঘ 4 বছর পর তাদের নতুন ফোন নিয়ে ভারতে হাজির হল। Google এর তরফে Google Pixel 7 এবং Google Pixel 7 Pro ভারতে লঞ্চ করা হয়েছে। আর এই বিষয়ে একটা জিনিস নিঃসন্দেহে বলা যায়, সেটা হল Google Pixel 7 Pro অন্যতম স্মুদ ফোন, বলা ভালো অন্যান্য অ্যান্ড্রয়েড ফোনের তুলনায় অনেক বেশি স্মুদলি চলে। শুধুই যে এই ফোন স্মুদলি চলে এমনটা নয়, একই সঙ্গে এই ফোনের AI এবং ML ক্যাপাবিলিটি যথেষ্ট প্রসংশার দাবিদার। আর এটার জন্য অবশ্যই এই ফোনের নতুন Tensor G2 প্রসেসরকে বাহবা দিতে হয়, এই চিপসেটের কারণেই ব্যবহারকারীর এই ফোন ব্যবহারের অভিজ্ঞতা অন্য মাত্রা পাবে। তবে সব জিনিসের যে সব জিনিস ভালো হবে এমনটা নয়। কিছু খুঁত তো থাকেই।
তাহলে এবার আসুন দেখে নেওয়া যাক আপনি কেন Google Pixel 7 Pro কিনবেন আর কেন কিনবেন না? এই প্রতিবেদন থেকে জেনে নিন এই ফোনের ভালো এবং মন্দ দুই দিকের কথা। এখানে Google Pixel 7 Pro ফোনটির চারটি পজিটিভ এবং তিনটি নেগেটিভ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হল। এবার পড়ে নিয়ে নিজেই সিদ্ধান্ত নিন যে কিনবেন কিনা।
এই ফোনটি তাঁর ক্যামেরার জন্য ভীষণই বিখ্যাত। এই ফোনে ট্রিপল ক্যামেরা সেটআপ আছেন প্রাইমারি ক্যামেরায় আছে 50 মেগাপিক্সেলের সেন্সর। সঙ্গে একটি 12 এবং 48 মেগাপিক্সেলের আরও দুটি ক্যামেরা মিলবে। এখানে 12 মেগাপিক্সেলের ক্যামেরাটি আসলে একটি আল্ট্রা ওয়াইড ক্যামেরা যেখানে 114 ডিগ্রি FoV আছে। অন্যদিকে 120mm 48 মেগাপিক্সেলের ক্যামেরায় আছে OIS এনাবেল টেলিফটো লেন্স যেখানে 5 গুণ জুমের অপশন পাবেন।
এই ফোনের সাহায্যে দারুন ছবি তোলা যাবে, সঙ্গে মিলবে দারুন কনট্রাস্ট, ডাইনামিক রেঞ্জ। ফলে গ্রাহকদের অভিজ্ঞতা যে এই ফোনের ক্যামেরা নিয়ে দারুন হবে সেটা বলাই বাহুল্য। এছাড়া এই ক্যামেরায় গ্রাহকরা ম্যাজিক ইরেজার, ফটো আনব্লার, ইত্যাদির সুবিধা পাবেন যেগুলো সাধারণত কোনও অ্যাপ থেকেই পাওয়া যায়। এই ফোনের ব্যাক এবং রিয়ার ক্যামেরা দুই ক্যামেরা দিয়েই 4K/60 fps ভিডিও করতে পারবেন।
Google Pixel 6 Pro নিয়ে মূলত যে কমপ্লেন শোনা যেত সেটা হল এই ফোন দ্রুত গরম হয়ে যায়। যদিও এই ফোনটি বেশ ফাস্ট, কিন্তু সামান্য কল, বা নেটে কিছু ব্রাউজ করতে গেলেও এই ফোন গরম হয়ে যেত। কিন্তু এই সব ঝামেলার Google Pixel 7 Pro তে একদমই নেই। এই ফোনটি পরিচালিত হয় Tensor G2 প্রসেসরের সাহায্যে। যা কিনা Google এর কাস্টম সিলিকন। আর এই চিপসেটকে Snapdragon এর Snapdragon 888 প্রসেসরের সঙ্গে বেশ তুলনা করা যায়। AI এবং ML প্রওয়েসের সঙ্গে দুর্দান্ত একটা অভিজ্ঞতা দেবে এই ফোনটি। ফলে আপনি স্বচ্ছন্দে এই ফোন দিয়ে একসঙ্গে একাধিক কাজ করতে পারবেন। কোনও অসুবিধা হবে না।
এই ফোনে কার্ভড 6.7 ইঞ্চির Quad HD+ ডিসপ্লে রয়েছে। এই ডিসপ্লেতে 120HZ রিফ্রেশ রেট মিলবে। Google Pixel 6 Pro ফোনে যেটা সব থেকে ঝামেলার বিষয় ছিল সেটা কিন্তু Google Pixel 7 Pro তে বদলে দেওয়া হয়েছে। Google Pixel 6 Pro ফোনের তুলনায় এই ফোনে 25% উজ্জ্বল ব্রাইটনেস মিলবে। এই ফোনের সর্বোচ্চ ব্রাইটনেস হল 1500 নিটস।
এই ফোনে ডিসপ্লের মধ্যেই ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর রয়েছে। Google Pixel 6 Pro তে যে ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার ছিল সেটার তুলনায় Google Pixel 7 Pro এর ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার অনেক ভালো এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য। এর ফলে লং শট নেওয়ার সময় এই ফোন ভীষণ সাহায্য করবে। কিন্তু তাই বলে এটা Samsung এর আল্ট্রাসনিক ইন ডিসপ্লে ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানারের মতো নয়।
এই ফোনটা কেনার অন্যতম কারণ হতে পারে এই ফোনের দাম। যেখানে আল্ট্রা প্রিমিয়াম ফোনগুলোর দাম আকাশ ছোঁয়া হয়, 1 লাখ টাকার বেশি দাম ছাড়িয়ে যায়, বা এন্ট্রি লেভেল কোনও ফ্ল্যাগশিপ ফোনের দাম 80,000 বা 90,000 থেকে শুরু হয় সেখানে এই ফোনটির দাম মাত্র 84,999 টাকা।
যেখানে প্রায় এক ফিচার যুক্ত Samsung Galaxy S22 ফোনটির দাম 1,10,000 টাকা ভারতে, সেখানে এই ফোন প্রায় 25,000 টাকা কমে পাবেন। তবে হ্যাঁ, Samsung Galaxy S22 এর মতো এখানে Stylus নেই। এটাই যা তফাৎ।
Google Pixel 6 Pro তে থাকা Tensor চিপের তুলনায় Google Pixel 7 Pro তে থাকা Tensor G2 চিপসেট সত্যি ভালো কাজ করে। তবুও Google এর একাধিক জিনিস সলভ করা উচিত। এখনও বেশ কিছু সমস্যা থেকে গিয়েছে। যদিও এই ফোনে একাধিক কাজ একসঙ্গে করলে বা গেম খেললে এই ফোন গরম হয় না, তবুও ক্যামেরা ব্যবহার করার সময় বা ফোনটা চার্জ দিলে সেটা কিন্তু গরম হয়ে যায়। আর এটা কিন্তু এমন নয় যে অনেকক্ষণ ছবি তোলার পর ফোন গরম হয়। যেই মুহুর্তে ক্যামেরা অন করবেন, তখন থেকেই ফোন গরম হতে থাকবে। আর কিছুক্ষণ পর তো ফোন এত গরম হয়ে যায় যে সেটা আর ধরে থাকাই যায় না। এছাড়া Google Pixel 7 Pro দিয়ে দীর্ঘক্ষণ ভিডিও করা যায় না।
একদিকে যখন এই ফোন ব্যবহার করে দারুন সব ছবি তোলা যায় তখন আরেকদিকে ক্যামেরা ব্যবহার করার সময় ফোন এরম গরম হতে থাকলে ব্যবহারকারীর বিরক্ত হয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক।
Google Pixel 7 Pro তে হিসেব মতো 5 বছরের সিকিউরিটি আপডেট থাকা উচিত ছিল, কিন্তু এক্ষেত্রে মাত্র 3 বছরের সফটওয়্যার সাপোর্ট মিলবে এই ফোনে। অর্থাৎ অ্যান্ড্রয়েড 16 বা অন্য যে নামে এটা আসবে সেটাই Google Pixel 7 Pro এর শেষ অ্যান্ড্রয়েড OS আপডেট হবে।
এই 3 বছরের অ্যান্ড্রয়েড সাপোর্টের বিষয়টা 2 বছর আগে পর্যন্ত ঠিক ছিল, কিন্তু এখন এটা বড়ই কম তাও এরম একটা ফ্ল্যাগশিপ ফোনের জন্য। Samsung তার ফ্ল্যাগশিপ ফোনগুলোর জন্য 4 বছরের অ্যান্ড্রয়েড OS সফটওয়্যার সাপোর্ট দেয়।
Google এর ফোন আর তাদের আচমকা দাম কমে যাওয়ার বিষয়টা নতুন কিছু নয়। এর থেকে বেশি কিছু বলার আগে বলি এটাই হচ্ছে অন্যতম কারণ এই ফোন না কেনার। যদি আপনি Google Pixel 7 Pro কিনতে চান তাহলে আর কিছুদিন অপেক্ষা করে যান।
Google ফোনের ইতিহাস অনুযায়ী এই ফোনগুলো বেশ একটা দাম নিয়ে ভারতে লঞ্চ হয়ে। অনেকেই তাদের ফিচার ইত্যাদি দিকে প্রথম দিকে ফোন কিন নেন। কিন্তু তারপর কয়েক মাসের মধ্যেই দেখা যায় আচমকা ফোনগুলোর দাম কমে গিয়েছে। যদিও জানা নেই যে Google Pixel 7 Pro ফোনটির ক্ষেত্রেও এক জিনিস হবে কিনা। তবে হ্যাঁ, এটা বলা যায় Google Pixel 6 A যখন লঞ্চ করেছিল তখন ফোনটির দাম ছিল 44,000 টাকা। কিন্তু মাত্র এক মাসের মধ্যেই সেলে এই ফোনটির দাম ঝপ করে কমে 28,000 টাকা হয়ে গিয়েছিল। এখনও এই ফোনটি 35,000 টাকায় বিকোচ্ছে যা আসল দামের তুলনায় বেশ কম।
তাই আপনি যদি Google Pixel 7 Pro কিনতে চান সব দিক বিবেচনা করে কিনুন। বলা ভালো আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করুন। তারপর দেখে শুনে কিনবেন নাহয়!