কিছুদিন আগেই নেপাল ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার সাক্ষী থাকল গোটা পৃথিবী। 68 জনের মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে এসেছে। এই 68 জনের মধ্যে যেমন যাত্রীরা আছেন, তেমনই আছেন বিমান কর্মীরাও। 15 জানুয়ারি, রবিবার দিন এই ইয়েতি এয়ারলাইন্সের প্লেনটি 72 জন জনকে নিয়ে তার গন্তব্যের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু পৌঁছাতে পারেনি। পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং পুরনো পোখরা বিমানবন্দরের মাঝের একটি জায়গায়, একটি বন ভূমির মধ্যেই বিমানটি ভেঙে পড়ে। সেই বিমান দুর্ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে আগুনের মতো। কয়েকজন ভারতীয় ছিলেন এই বিমানে, তাঁরাও প্রাণ হারিয়েছেন।
ইতিমধ্যেই এই দুর্ঘটনার তদন্তের জন্য 5 সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শুরু হয়ে তদন্ত। কিন্তু একই সঙ্গে এই দুর্ঘটনার নেপথ্যের কারণ হিসেবে উঠে আসছে নানা দাবি। কেউ কেউ বলছেন নিয়ম ভেঙে নাকি বিমানটি অনেক উঁচুতে উঠে গিয়েছিল সেই কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। কারও মতে 5G -এর জন্যই নাকি এই দুর্ঘটনা ঘটেছে! অতিরিক্ত ফোনের ব্যবহারের জন্যই কি তবে এতগুলো মানুষকে প্রাণ হারাতে হল? স্রেফ স্মার্টফোনের জন্য কি এমন ধরনের বিরাট দুর্ঘটনা ঘটতে পারে? কী জানা যাচ্ছে? কেনই বা বিমানে ফোনকে ফ্লাইট মোডে রাখতে বলা হয়? এর নেপথ্যে রয়েছে কোন বিশেষ কারণ?
আপনি লক্ষ্য করে থাকবেন, বিমান ওঠার সময়ই বিমান কর্মীদের তরফে বলে দেওয়া হয় সমস্ত যাত্রীরা যেন তাঁদের ফোন অফ রাখেন বা ফ্লাইট মোডে রাখেন। কিন্তু কখনও ভেবেছেন যে কেন এই নির্দেশ দেওয়া হয়? আসল মনে করা হয় যে মোবাইলের সিগন্যালের কারণেই বিমান চালককে অসুবিধায় পড়তে হতে পারে। তিনি হয়তো বা তাঁর সঙ্গে হয়তো এটার জন্য এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ঠিকভাবে যোগাযোগ করে উঠতে পারে না। গোটা প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে যায়। আর তাই বিমানে সকলকে ফোন অফ বা ফ্লাইট মোডে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়ে থাকে। কারণ বিমান চলাকালীন যদি বিমান চালক এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে সঠিকভাবে যোগাযোগ না করতে পারেন তাহলে বিপদ ঘটতে পারে।
কিন্তু কিছু বিশেষজ্ঞের মতে মোবাইল টাওয়ারের কারণে মোটেই বিমান দুর্ঘটনা ঘটে না। এতে কোনও ঝুঁকি নেই। স্রেফ নিরাপত্তা বজায় রাখার কারণেই ফোন অফ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয় বলেই তাঁদের মত। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে এই বিমান দুর্ঘটনার জন্য যাঁরা 5G -কে দায়ী করছেন তাঁরা ভুল। এই ভাবনা অমূলক বলেই দাবি তাঁদের। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন নেপালে তো এখনও পর্যন্ত সি ব্যান্ড বসানো শুরু হয়নি।
কিন্তু বিশেষজ্ঞদের একদম উল্টো কথা বলছে Forbes -এর রিপোর্ট। কী বলা হচ্ছে এই রিপোর্টে? এখানে দাবি করা হয়েছে যে 5G পরিষেবার সি ব্যান্ডের জন্যই নাকি এই বিমানটির রেডিও অল্টিমিটার ইঞ্জিনটির ক্ষতি হয়েছে। শুধু খারাপ নয় এই কারণে নাকি সেটা বিকল পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে! আর এই কারণের জন্য বিমান ভেঙেও পড়তে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এটি হচ্ছে ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডউইদথ। এটি মূলত 3.7 থেকে 4.2 GHZ রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির মধ্যে কাজ করে। আর এই ফ্রিকোয়েন্সি কিন্তু বিমানের রেডিও সিগন্যালকে ধরে ফেলে। একই সঙ্গে প্লেন এবং মাটির মধ্যে কতটা ফারাক আছে সেটাও নির্ধারণ করে। এই ফ্রিকোয়েন্সির সাহায্যেই একটি প্লেন কুয়াশা থাকলে বা বৃষ্টি হলে কিংবা বরফ পড়লে অবতরণ বা উড়তে পারে। আর সেই কারণেই বিমান ওড়ার সময় বা নামার সময় আলাদা কর ফোন বন্ধ রাখার বদলে গোটা প্লেন জার্নিতেই ফোন অফ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয় সুরক্ষার কারণে। কারণ মোবাইল সিগন্যাল অনেক সময়ই এই ফ্রিকোয়েন্সিকে প্রভাবিত করে। এটার ফলে সমস্যার মধ্যে পড়তে পারেন বিমান কর্মীরা। তবে হ্যাঁ, একটা দুটো ফোন যদি চালু থাকে তাহলে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবুও সাবধানের মার নেই! নেপাল দুর্ঘটনার মতো বিপদ এড়াতে ফোন অফ বা ফ্লাইট মোডে রাখাই শ্রেয়। যদিও এই বিষয় এটা অবশ্যই উল্লেখযোগ্য যে, Forbes রিপোর্টে 5G সি ব্যান্ডের কথা বলা হলেও নেপালে এখনও 5G পরিষেবা চালু হয়নি। ফলে এই দুর্ঘটনার নেপথ্যের কারণ হিসেবে 5G কে দায়ী করা অমূলক।