আপনি যে ফোনই কিনুন না কেন সেই ফোনেই আগে থেকে একগুচ্ছ স্মার্টফোন প্রি-ইনস্টলড থাকে। এতে অকারণ ফোনের অনেকটা জায়গা দখল হয়ে থাকে। এবার এই নিয়মের বদল ঘটাতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সরকারের তরফে দেশে যে স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলো আছে তাদের বলা হবে এমন একটি অপশন রাখতে যাতে যে গ্রাহকরা ওই প্রি-ইনস্টলড অ্যাপ চাইবেন না তাঁরা যেন সহজেই সেগুলোকে ডিলিট করতে পারেন।
ভারত সরকারের একটি প্রস্তাবিত পরিকল্পনার পার্ট হচ্ছে এটি। এই প্রি-ইনস্টলড অ্যাপের উপর যে ক্র্যাকডাউন করা হবে সেটাকে বলা হয় ব্লটওয়্যার। এই নিয়মের ফলে সমস্ত যে মোবাইল অপারেটিং সংস্থাগুলো আছে সেগুলোর স্ক্রিনিং বাধ্যতামূলক হয়ে যাবে দেশে। আসলে কেন্দ্রীয় সরকার এখন গুপ্তচরবৃত্তি এবং নাগরিকদের ডেটা অপব্যবহার নিয়ে ভীষণই উদ্বিগ্ন হয়ে আছে। আর সেই কারণেই এই নতুন নিয়ম আনছে। এছাড়া অন্যদিকে ইতিমধ্যেই দেশে ভারতের নিজের অপারেটিং সিস্টেম তৈরি কাজ চলছে। এই অপারেটিং সিস্টেমের নাম হবে Bharat OS।
নতুন রিপোর্টে বলা হয়েছে যে ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডের একটি অনুমোদিত ল্যাব পরীক্ষা রাখা হবে। সেটার মধ্যে দিয়েই সমস্ত নতুন স্মার্টফোনকে পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক করা হবে। এতে মনে করা হচ্ছে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিদ্র হবে। এমনকি এও জানা গিয়েছে সরকার এই নতুন নিয়ম আনলে সমস্ত স্মার্টফোন প্রস্তুতকারককে এক বছরের টাইম দেবে আগে থেকে ইনস্টল করে রাখা অ্যাপ সরানোর জন্য। কিন্তু কবে এই নিয়ম চালু করবে ভারত সরকার সেটা এখনও জানা যায়নি।
একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে আগে থেকে ফোনে যে অ্যাপগুলো ইনস্টল করা থাকে সেগুলো বিপজ্জনক। জাতীয় সুরক্ষাকে লঙ্ঘিত করতে পারে। তিনি এই বিষয়ে বলেছেন, নিরাপত্তাকে দুর্বল করে দিতে পারে এই প্রি-ইনস্টলড অ্যাপ। তাই আমাদের লক্ষ্য হল কোনও বিদেশি শক্তি যাতে এটকে হাতিয়ার করে খারাপ কাজ না করতে পারে। দেশের নিরাপত্তার জন্য এটা জরুরি। Xiaomi, Vivo, Samsung, Apple সহ অন্যান্য ফোন প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সরকারের তরফে ইতিমধ্যেই বৈঠক সেরে ফেলা হয়েছে।
আপনি অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহারকারী হন বা iPhone, দুই ধরনের ফোনেই এই অপারেটিং সিস্টেম এবং কিছু থার্ড পার্টি অ্যাপ আগে থেকে ইনস্টল করা থাকে। যদিও আইফোনের ক্ষেত্রে এই অ্যাপগুলো অধিকাংশ সময়ই ডিলিট করে দেওয়া যায়, অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ক্ষেত্রে কিন্তু সেটা হয় না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় Google Chrome, GMap, ইত্যাদি। এছাড়া কিছু কিছু কোম্পানি যেমন Xiaomi বা Samsung -এর তরফে অন্যান্য একাধিক অ্যাপ যেমন ক্যামেরা, স্যামসাং পে, ইত্যাদি দেওয়া হয়ে থাকে এই অ্যাপগুলো আগে থেকেই ইনস্টলড থাকে।
এমন অবস্থায় দাঁড়িয়ে নতুন নিয়ম ভারত সরকার চালু করে দিকে এই ব্র্যান্ডগুলোর ব্যবসার দিক দিয়ে ব্যাপক একটা ধাক্কা পাবে। কেন? কারণ Meta, বা এই ধরনের অ্যাপের সঙ্গে এই অ্যান্ড্রয়েড ব্র্যান্ড হাত মিলিয়ে রেখেছে। ফলে একটা আয় কমার আশঙ্কা তো থাকছেই। তবে এটা প্রথমবার নয়। এর আগেও ভারতে একাধিক চিনা অ্যাপ ব্যান করে দেওয়া হয়েছে। টিকটক, উইচ্যাট, ইত্যাদি সহ ৩০০ এর বেশি চিনা অ্যাপ নিষিদ্ধ হয়েছে ভারতে। অন্যদিকে ভারত নিজে যে অপারেটিং সিস্টেম বানাচ্ছে সেখানেও যে থার্ড পার্টি অ্যাপের নির্ভরতা কমাবে সেই ইঙ্গিত মিলেছে। এখন এই অপারেটিং সিস্টেম তৈরির কাজ চলছে।