আপনি কি ভিডিও তৈরী করতে ভালোবাসেন? বিভিন্ন কনটেন্ট এর কথা ভাবনায় আসে, এমন কিছু বিষয় যেগুলি উপস্থাপন করলে মানুষ পছন্দ করবে? কিন্তু বুঝতে পারছেন না কীভাবে সেগুলি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ছাড়বেন অথবা কিভাবে রোজগার করবেন আপনার তৈরী ভিডিওর মাধ্যমে? তাহলে শেষ পর্যন্ত পড়ে জেনে নিন কীভাবে আপনি আপনার যাত্রা শুরু করবেন…
ভিডিও কনটেন্ট উপস্থাপন এবং তার মাধ্যমে ইনকামের একটি মাধ্যম হল YouTube। বিশ্বজুড়ে অসংখ্য ভ্লগাররা এই মাধ্যমে মাসে লক্ষ লক্ষ মার্কিন ডলার রোজগার করে।
বিভিন্ন রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিদিন প্রায় 200 কোটি মানুষ নিয়মিত YouTube এ ভিডিও দেখেন। প্রত্যেক মিনিটে প্রায় 500 ঘন্টারও বেশি স্ট্রিম হয় এই প্ল্যাটফর্মে। সুতরাং YouTube এ নিজের জায়গা করে নিতে হলে কঠিন প্রতিযোগিতায় নিজেকে মেলে ধরতে হবে। রোজগার করতে হলে আপনাকে আগে এই প্ল্যাটফর্মে নিয়মিত একটি স্ট্রং এবং স্টেবেল দর্শক বানাতে হবে। ভিডিও প্রকাশ করার আগে যে যে বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে, সেগুলি হল-
ভিডিও বানানোর আগে সবার আগে বেছে নিতে হবে কোন বিষয় আপনি কাজ করতে চান। আপনার পছন্দ করা কনটেন্ট আপনার নিজের কাছে কতোটা ক্লিয়ার? এরপর সেই নির্দিষ্ট বিষয়টির উপরে তৈরী করুন ভিডিও। আপনার কনটেন্ট যদি একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর হয় এবং ভালো হয়, তাহলে দর্শক আপনার ভিডিও অবশ্যই দেখবে এবং বিভিন্ন বিষয় যখন-তখন যেকোনো ভিডিও বানালে দর্শকেরা কনফিউজড হয়ে যাবে।
প্রত্যেকটি বিষয় নির্দিষ্ট দর্শকদের আকর্ষণ করে। আপনার ভিডিও কোন ধরনের দর্শকরা পছন্দ করবে সেটা ঠিক করে নির্দিষ্ট বাজার ঠিক করুন।
যদিও আপনার কনটেন্ট টাই আসল। তবে ভিডিওর কোয়ালিটি যত ভালো হবে, মানুষের দেখার আগ্রহ ততই বাড়বে। শুরুতে একটি ভালো ক্যামেরা, আলো, মাইক্রোফোন একটি প্রফেশনাল ভিডিও তৈরীর জন্য যথেষ্ট। এরপর আসতে আসতে আরো ইলেকট্রনিকস জিনিস কিনতে পারেন।
নিয়মিত ভিডিও পোস্ট না করলে আপনি আপনার ফলোয়ারদের হারাতে পারেন। এছাড়াও প্রত্যেক ভিডিওতে দিতে হবে কি-ওয়ার্ড। এবং নিজের ভিডিওর ট্রাফিক বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আপনাকেই নিতে হবে।
YouTube থেকে রোজগার করার জন্য সবার প্রথমে আপনার চ্যানেলে একবছরের মধ্যে 1000 সাবস্ক্রাইবার থাকতে হবে। সাবস্ক্রাইবার সংখ্যায় আপনি টাকা না পেলেও আপনার যতো বেশি সাবস্ক্রাইবার হবে ততো আপনার রোজগারের পরিমাণ বাড়বে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- আপনার চ্যানেলে যতো বেশি সাবস্ক্রাইবার থাকবে ততো বড় বড় কোম্পানি আপনার চ্যানেলে ব্র্যান্ড প্রোমোশনের ইচ্ছা প্রকাশ করবে।
1 বছর বা 365 দিনের মধ্যে 1000 সাবস্ক্রাইবার এবং 4000 ঘন্টা ওয়াচ টাইম হলে তবে আপনার চ্যানেলটি মনিটাইজেশনের জন্য অ্যাপ্লিকেবল হবে। তবে মনিটাইজ হয়ে গেলেই যে টাকা আসবে, তা নয়। মনিটাইজ হলে আপনার ভিডিওতে বিজ্ঞাপন আসবে। সেগুলিতে কেউ ক্লিক করে সম্পূর্ণ বিজ্ঞাপন দেখলে তবেই রোজগার করতে পারবেন Youtube থেকে।
যদিও শুধুমাত্র YouTube এর বিজ্ঞাপন থেকে রোজগার শুরুর দিকে বেশি হয়না। তাই ধৈর্য্য ধরতে হবে এবং পাশাপাশি ব্যাক আপ প্ল্যান ও রাখতে হবে, যতোদিন না ভালো জায়গায় যায় আপনার চ্যানেল।
আপনার চ্যানেলটি মনিটাইজ হয়ে গেলে আপনি ভিডিয়োতে বিজ্ঞাপন পাওয়ার জন্য YouTube Partner প্রোগ্রাম এ যোগ দিতে পারেন। প্রত্যেকটি ভিডিও থেকে আসা টাকার কিছু অংশ কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের দেয় YouTube।
YouTube Studio থেকে Monitization বিভাগে গিয়ে চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দেখানো সিলেক্ট করতে পারবেন। এবং এখানেই ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে আপনার ইনকাম দেখে নিতে পারবেন।
একবার YouTube Partner প্রোগ্রাম এর সাথে যুক্ত হলে AdSense একাউন্ট খুলতে পারবেন, যেখান থেকে বিজ্ঞাপন এর মাধ্যমে রোজগারের টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করতে পারবেন।
YouTube এ একবার ইনকাম করা শুরু হয়ে গেলে আপনি YouTube Premium -এ সাইন আপ করতে পারবেন। এটির মাধ্যমে আপনার ভিউয়াররা চাইলে কিছু টাকার বদলে বিজ্ঞাপন ছাড়াই আপনার ভিডিও দেখতে পাবেন। এটি আপনার সাবস্ক্রাইবার দের থেকে ইনকাম করার দ্বিতীয় উপায় বলা যায়।
YouTube এর সকল কনটেন্ট ক্রিয়েটরই টাকা পাওয়ার উদ্দেশ্যে ভিডিও বানায়। কিন্তু শুধুমাত্র বিজ্ঞাপনের থেকে পাওয়া টাকায় সবার মন ভরেনা। তাদের জন্য রইল রোজগারের অন্যান্য উপায়-
টি-শার্ট, কফি মগ, ব্যাগ, ছাতা ইত্যাদি নিজস্ব মার্চেনডাইস বিক্রি করেও এই প্ল্যাটফর্ম এ ইনকাম করা যায়। প্রত্যেক ভিডিওর নিচে দেখা যায় এসকল মার্চেনডাইস।
একবার আপনার চ্যানেলে স্থায়ী দর্শক তৈরী হয়ে গেলে বিভিন্ন সাইটের মাধ্যমে দর্শকদের কাছ থেকে রোজগার করতে পারবেন।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনার রোজগার অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে। তবে কোন ব্র্যান্ড এর সাথে আপনার কন্ট্রাক্ট থাকলে তা ভিডিওতে জানিয়ে দেবেন।
আপনার ভিডিও লাইসেন্সিং করা থাকলে কোনো ভিডিও আপনার ভাইরাল হয়ে গেলে, আর সেটা অন্য কেউ ব্যবহার করতে গেলে আপনাকে তাদের কিছু পরিমাণ টাকা দিতে হবে।
চ্যানেলে মেম্বারশিপ নিলে এক্সট্রা কিছু ফিচার পাওয়া যায়। এগুলির কথা আপনার সাবস্ক্রাইবার দের জানান। যতো বেশি মেম্বার হবে ততো বেশি টাকা পাবেন।
আপনি যদি লাইভ স্ট্রিম করেন তাহলে সুপার চ্যাট নামক একটি ফিচার আছে যার মাধ্যমে দর্শকরা টাকা পাঠিয়ে নিজের কমেন্ট হাইলাইট করতে পারেন। তবে এর কিছু অংশ YouTube নিজের জন্য কেটে নেয়। এই ফিচারের মাধ্যমে দর্শকদের সাথে সম্পর্কও স্ট্রং হয় আর আপনার রোজগারও বাড়ে।