আপনি কি নতুন টিভি কেনার কথা ভাবছেন। বুঝতে পারছেন না কেমন টিভি কিনলে ভালো হবে? আজকাল স্মার্ট টিভি কেনা কিন্তু খুব একটা সহজ কাজ নয়। প্রত্যেকটি ব্র্যান্ডই বিভিন্ন স্ক্রিন সাইজের, বিভিন্ন রেজোলিউশনের টিভি অফার করে। একটা ভালো কোয়ালিটির টিভি চলতে পারে বছরের পর বছর ধরে। তাই এমন কোনো ভালো টিভি কিনতে গেলে মাথায় রাখতে হবে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নতুন টিভি কেনার আগে যাচাই করে নিতে হবে সবকটি। আসুন একনজরে জেনে নেওয়া যাক নতুন টিভি কেনার সময় আপনি কোন কোন গুণগুলির ওপর বিশেষ নজর দেবেন –
যে কোনো টিভি কেনার আগে আপনাকে সবার আগে যে জিনিসটা মাথায় রাখতে হবে তা হল টিভির ডিসপ্লে সাইজ। আপনার ঘর যদি বড়ো হয় তবে বড়ো ডিসপ্লে সাইজের টিভি ঘরকে আরও সুন্দর করে তুলবে। সেইসঙ্গে পাওয়া যাবে আরও বেশি সিনেম্যাটিক এক্সপেরিয়েন্স। কিন্তু আপনার ঘর যদি ছোট হয়, আর আপনি সিনেম্যাটিক এক্সপেরিয়েন্সের জন্য বড় সাইজের টিভি কেনেন, তবে তা কিন্তু অস্বস্তির কারণ হতে পারে। আরও একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে যে টিভির ডিসপ্লের থেকে কত দূরে রয়েছে সিটিং এরিয়া। সাধারণত ড্রয়িং রুমের সিটিং এরিয়াতে কিংবা বেড রুমে বিছানা বা কাউচে বসে আমরা টিভি দেখি। সেক্ষেত্রে একটা সচেতন দুরত্ব মেনে চলতে হবে ডিসপ্লে থেকে। আপনি যদি জানতে চান যে আপনার টিভির স্ক্রিন সাইজের সঙ্গে উপযুক্ত বসার জায়গার দূরত্ব কত হবে তাহলে ডিসপ্লে সাইজকে 10 দিয়ে ভাগ করতে পারেন। যেমন ধরুন আপনার টিভির স্ক্রিন সাইজ 55 ইঞ্চি, তাহলে আপনাকে টিভি থেকে 5.5 ফিট দুরত্বে বসতে হবে। আপনার টিভির স্ক্রিন সাইজ 65 ইঞ্চি বা 75 ইঞ্চি হলে আপনাকে 6.5 ফিট বা 7.5 ফিট দূর থেকে টিভি দেখতে হবে। আপনি চাইলে নিজের বসার জায়গাকে আরও পিছিয়ে নিয়ে যেতে পারেন তবে এগিয়ে গিয়ে টিভি দেখতে ভিজ্যুয়ালে অস্বস্তি হতে পারে।
আপনার যদি 32 ইঞ্চি, 40 ইঞ্চি বা 43 ইঞ্চির টিভি কিনতে না চান তবে নির্দ্বিধায় আপনি 4K রেজোলিউশনের টিভি কেনার কথা ভেবে দেখতে পারেন। কিছু কিছু ব্র্যান্ড 4K রেজোলিউশনের টিভিতে দিচ্ছে 720P থেকে 1080P পর্যন্ত পিকচার কোয়ালিটি। তবে 43 ইঞ্চি বা তার কমের ডিসপ্লে সাইজের ক্ষেত্রে কেনা যেতে পারে 1080P পিকচার কোয়ালিটির টিভি। এখন 8K রেজোলিউশনের টিভি কেনা পয়সা অপচয়ের সমান। 8K রেজোলিউশনের টিভিগুলির দাম যে শুরু বেশি এমন নয় সেইসঙ্গে বিভিন্ন স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলি এমন কোনো কনটেন্ট অফার করে না যা 8K রেজোলিউশনে দেখা সম্ভব।
এইচডিআর বলতে বোঝায় স্ক্রিনের হাই ডায়নামিক রেঞ্জকে। কালার, ব্রাইটনেস ও কন্ট্রাস্টের দিক থেকে দেয় আরও উন্নত ভিসন কোয়ালিটি। সবচাইতে উন্নত এইচডিআর স্ট্যান্ডার্ড হল ডলবি ভিসন। নামের মতনই ডলবি ভিসন পিকচার কোয়ালিটি দেখা যায় দামী ও বড়ো ডিসপ্লের টিভিগুলিতে। এইচডিআর 10 স্ট্যান্ডার্ড পিকচার কোয়ালি্টির দেখা মেলে বেশ কিছু টিভিতে। আজকাল বেশ কিছু ব্র্যান্ডই বাজেটের মধ্যে ডলবি এইচডিআর ভিসন অফার করে। তবে এদের বেশিরভাগেই পাওয়া যায়না যথাযথ ডলবি পিকচার এক্সপেরিয়েন্স। তাই সবসময়েই স্ট্যান্ডার্ড এইচডিআর সমেত টিভি কেনার ক্ষেত্রে স্ক্রিনের পিক ব্রাইটনেস কি অফার করা হচ্ছে সেইদিকে নজর রাখবেন। সাধারণত 400 নিটের পিক ব্রাইটনেসে ডলবি ভিসন ঠিকভাবে সাপোর্ট করে।
আজকাল সমস্ত স্মার্টটিভিই কাজ করে অপারেটিং সিস্টেমে। বিভিন্ন জনপ্রিয় ব্র্যান্ড যেমন LG টিভিতে রয়েছে WebOS অপারেটিং সিস্টেম। Samsung ব্র্যান্ডের স্মার্টটিভিগুলির অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে রয়েছে টাইজেন। সোনি, রেডমি, ওয়ানপ্লাস ব্র্যান্ডের স্মার্টটিভিগুলি চলে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড টিভি UI অপারেটিং সিস্টেমে। এই সমস্ত অপারেটিং সিস্টেমগুলি কোনোরকম এক্সটারনাল ফাংশান ছাড়াই ডিভাইসকে ইন্টারনেটের সঙ্গে কানেক্ট করে বিভিন্ন স্ট্রিমিং সার্ভিস এনজয় করতে সাহায্য করে। আজকাল বেশিরভাগ স্মার্টটিভি কাজ করে গুগল অ্যাসিস্টেন্ট ও অ্যালেক্সার মতো স্পিকার ডিভাইসের কন্ট্রোলে। এই ধরণের অপারেটিং সিস্টেম থাকার ফলে স্মার্ট টিভিতে থাকে ভয়েস এনাবেল রিমোট কন্ট্রোল ফিচার যার ফলে কোনো রকম রিমোট ছাড়াই কেবল ভয়েসের মাধ্যমে অ্যাক্সেস করা যাবে এই ডিভাইসগুলিকে। স্মার্ট টিভির মাধ্যমে কন্ট্রোল করা যাবে গুগল অ্যাসিস্টেন্ট বা অ্যালেক্সার মাধ্যমে চলে এমন কোনো স্মার্ট বাল্ব বা সিকিউরিটি বাল্বকেও কন্ট্রোল করা যেতে পারে স্মার্ট টিভির মাধ্যমে।
আপনি যদি আপনার টিভির সঙ্গে হোম থিয়েটার বা সাউন্ডবার কানেক্ট করাতে চান তবে আপনার টিভি যাতে HDMI ARC অথবা এআরসি পোর্টের সাপোর্টের সঙ্গে আসে তা দেখে নেবেন। ARC বলতে বোঝায় অডিও রিটার্ন চ্যানেল। eARC কথার অর্থ হল এনহ্যান্সড অডিও রিটার্ন চ্যানেল। আপনি যদি ফিউচার প্রুফ ফিচার সমেত টিভি কিনতে চান তবে HDMI 2.1 স্ট্যান্ডার্ডের টিভি কিনতে পারেন। এই ধরণের টিভি আসে অডিও পোর্ট ও অনেকসময়ে 3.5মিমি. AUX পোর্টের সঙ্গে। যে সমস্ত টিভি ইউএসবি পোর্টের ফিচারসমেত পাওয়া যায়, সেগুলিতে পেনড্রাইভ ইনসার্ট করার সুযোগ রয়েছে। কিছু কিছু টিভিতে থাকে Bluetooth কানেক্টিভিটির ফিচার। এই ধরনের টিভিতে ইথারনেটের মাধ্যমে ইন্টারনেটের কানেকশন ও করা যায়।